* ইসলামি ভাবধারার নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ১২টি
* অন্তর্বর্তী সরকার আসার পরে জামায়াত সবচেয়ে বেশি সুসংহত হয়েছে : কলিম উল্লাহ
* ইসলামি রাষ্ট্রের যে ধারণা তাতে কারো দ্বিমত নেই : মিয়া গোলাম পরওয়ার, সেক্রেটারি জেনারেল-জামায়াত
* ইসলামি দলগুলোর নির্বাচনী সমঝোতা দেখতে চাই : ইউনুছ আহমাদ, মহাসচিব-ইসলামী আন্দোলন
* ধর্মভিত্তিক দলগুলো এক আসনে একজন প্রার্থী দিলে ভালের ফল আসবে : আবদুল কাদের, খেলাফত মজলিস
ত্রয়োদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তৎপর হয়ে উঠেছে সব ক’টি রাজনৈতিক দল। এরইমধ্যে ভোটের রাজনীতিতে সফলতা পেতে বিভিন্ন দলের মধ্যে নতুন জোট গঠনের গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ইসলামি ভাবধারার নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ১২টি। তবে এতদিন সংস্কারের কথা বললেও জোটের গুঞ্জনে পিছিয়ে নেই ইসলামি দলগুলোও। একইসঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে বেশ কয়েকটি ইসলামী দল। নিজেরা জোট বাঁধার পাশাপাশি অন্য কোনো জোটে ভেড়ার চেষ্টাও অব্যাহত রেখেছেন দলগুলোর অনেক নেতা। শুধু তাই নয়, বৈরিতা ভুলে কাছাকাছি আসার উদ্যোগ নিয়েছেন দলগুলোর নেতারা। তবে বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার মতে, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে ‘একলা চল’ নীতির ফল ভালো হয়নি। তাই আগামীতে তারা জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামতে চান। তবে এ উদ্যোগ কতটা সফল হবে তা সময়ই বলবে।
জানা গেছে, জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও রাজনীতির মাঠে কার্যত আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতি ইসলামপন্থি দলগুলোর জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করেছে কি না তা নিয়ে জনপরিসরে ও রাজনৈতিক মহলে আলোচনা রয়েছে। একইসঙ্গে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্রিক ঐক্যমুখী রাজনীতি নতুন মেরুকরণের আভাস দিচ্ছে, যেখানে আদর্শিক রাজনীতি ও ভোটের হিসাব গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে আগের সংসদ নির্বাচনগুলোর ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জামায়াত নিজেদের শক্তিতে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে পারলেও অন্য ধর্মভিত্তিক দলগুলো সেটা পারেনি। তাদের ভোটে জেতার জন্য বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মত বড় দলের সঙ্গে জোট বাঁধতে হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে কি না সে প্রশ্নের মীমাংসা এখনো হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়া জামায়াত ক্ষমতার রাজনীতির সমীকরণ বদলে দিতে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে ভোটকেন্দ্রিক সমঝোতায় আসার চেষ্টা করছে। তবে ভোটের মাঠের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগের আমলে জাতীয় ও স্থানীয় প্রায় সব নির্বাচনে অংশ নেয়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এই প্রক্রিয়ায় মওদুদীবাদের ‘আক্বিদা’ নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে ক্বওমী ঘরানার দলগুলোর যে ঐতিহাসিক দূরত্ব রয়েছে, তা নতুন করে সামনে আসছে। এবার সে দূরত্ব ঘুচতে যাচ্ছে, না কি জামায়াতের সঙ্গে জোট গড়ার ধুয়া তুলে ধর্মভিত্তিক দলগুলো দর কষাকষি করে বিএনপির কাছে থেকে আসন নিশ্চিত হতে চায়, সে আলোচনাও রয়েছে। মূলত ইসলামপন্থি দলগুলোর জোট বাঁধার আলোচনার সূত্রপাত ৫ অগাস্ট পরবর্তী সময়ে নিজ দলের ব্যানারে ও রাজনৈতিক পাড়ায় প্রকাশ্যে জামায়াতের কার্যক্রম শুরু হলে। নিষিদ্ধ থাকলেও তখন দলটি দীর্ঘদিনের গোপনীয়তা ভেঙে সামনে এসে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করে। আক্বিদার প্রশ্নে একদম বিপরীত মেরুতে থাকা দলগুলোর নেতাদেরও সঙ্গে আলোচনা করছে জামায়াত।
এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ বলেন, এবার ইসলামি দলগুলোর জোট না হলেও নির্বাচনী সমঝোতা দেখতে চাই। একটি আসনে সবার পক্ষ থেকে একজন প্রার্থী থাকবে। তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বৈষম্যের বিপরীতে যে জনআকাক্সক্ষা তৈরি হয়েছে, সেখানে মানুষ চায় ‘একটা বিকল্প শক্তি গড়ে উঠুক’। তিনি বলেন, আমরা এবার ইসলামী দলগুলোর জোট না হলেও নির্বাচনী সমঝোতা দেখতে চাই। একটি আসনে ইসলামি দলগুলোর পক্ষ থেকে একজন প্রার্থী থাকবে। আমরা অনেক দলের কাছে যাচ্ছি। অনেক দল আমাদের কাছে আসছে। সামনে অন্যান্য দলের কাছেও যাব।
দেশে ইসলামি ভাবধারার নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা মোট ১২টি। আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করলেও আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দলটির নিবন্ধন ফিরে পাওয়া প্রায় নিশ্চিত। রাষ্ট্র পরিচালনা, দলীয় মূলনীতি ও ইসলামি আকিদা’র প্রশ্নে এই দলগুলোর মধ্যে বিভেদ ও মতপার্থক্য বরাবরের। যে কারণে অতীতে কখনও এই দলগুলোকে ভোটের মাঠে কোন ঐক্য গড়তে দেখা যায়নি। গত ৫ আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবার জোটবদ্ধ নির্বাচনের কথা ভাবছে অধিকাংশ ইসলামি দল। নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনাও হয়েছে বহুবার। যদিও চূড়ান্ত কথা বলার সময় এখনও আসেনি, তবে বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক ভাবেই ভাবছেন দলগুলোর নেতারা। জোটবদ্ধ না হলেও আসন সমঝোতার ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনে লড়ার সম্ভাবনা দেখছেন তারা। দেশের সবচাইতে বড় ইসলামি দল জামায়াতে ইসলামী। দেশের ইসলামি ভাবধারার দলগুলোকে এক মঞ্চে নিয়ে আসার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে দলটি।
জামায়াতের দুই নেতা গোলাম পরওয়ার ও হামিদুর রহমান আজাদ বলছেন, নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে জোট গঠনের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। একক বা কিংবা জোট-দু’ভাবেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। তবে সম্ভাব্য জোট নিয়ে শতভাগ আশাবাদী ইসলামি আন্দোলন। দলটির মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমাদ বলছেন, জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে দোদুল্যমান ভোটারদের একটি বড় অংশের সমর্থন পাবেন তারা।
আগামী নির্বাচনে জোট গড়ার ব্যাপারে আশাবাদী খেলাফত মজলিশও। সব কিছু ঠিক থাকলে নির্বাচনের আগেই ইসলামি শক্তিগুলোর সম্ভাব্য একটি ঐক্য মোর্চা জনগণ দেখতে পাবেন বলে আশাবাদী দলগুলোর নেতারা। তবে আনুষ্ঠানিক কোন ঘোষণা না এলেও ভোটের আগে ইসলামিক দলগুলো এক মঞ্চে আসছে, এমন ইঙ্গিত মিলেছে নেতাদের বক্তব্যেই। তবে জোট গঠনের এই সমীকরণ কতটা মিলবে বা ভোটের রাজনীতিতে তারা কতটা সফলতা পাবে, সেই হিসাব নিকাশই করছে দলগুলো।
এদিকে, বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর ঐক্য বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দলগুলো ও আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ অন্যান্য ইসলামিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা বহুবার করলেও কিছু বিতর্কিত বিষয় সে পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আলা মওদুদীর ‘আক্বিদা’ নিয়ে অনেক ক্বওমী ঘরানার আলেমের ক্ষোভ রয়েছে। এ কারণে এখনো জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য করার ব্যাপারে ধর্মভিত্তিক দলগুলো সাবধানী অবস্থানে রয়েছে। ইসলামিক মুভমেন্ট বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টিসহ কয়েকটি দল জামায়াতের সঙ্গে ঐক্যকে সমর্থন করছে না। এ কাতারে আছে হেফাজতে ইসলামও। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘এক প্ল্যাটফর্মে আনার যে চেষ্টা জামায়াতের তাতে হেফাজতসহ আরো কয়েকটি সংগঠন ও দলের যুক্ত হওয়ার ইঙ্গিত ছিল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হকের বিভিন্ন বক্তব্যেও। তিনি হেফাজতেরও নেতা। তবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর বক্তব্যে ঐক্যের বিষয়টি থমকে যায়।
গত ২৫ অক্টোবর ফেনী মিজান ময়দানে দেয়া বক্তব্যে মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, আমরা জামায়াতে ইসলামকে ইসলামী দল মনে করি না। জামায়াতে ইসলাম মদিনার ইসলাম চায় না, তারা মওদুদীর ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এ সমস্যা যে শুধুমাত্র এবারই হয়েছে, তা নয়। ১৯৮১ সালে মাওলানা মোহাম্মদউল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর যখন রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হন তখনো জামায়াতের সমর্থন অগ্রাহ্য করেছেন তিনি। হাফেজ্জী হুজুর জামায়াতকে মওদূদীর ‘ভ্রান্ত আক্বিদা’ সংশোধন করে সেটির সংবাদও প্রকাশের কথা বলেন। তাতে জামায়াত সাড়া দেয়নি। প্রায় ৪৪ বছর ধরে জামায়াতের সঙ্গে অন্য ধর্মভিত্তিক দলগুলোর দূরত্বের আরেক কারণ একাত্তরে দলটির বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে আমাদের যে পার্থক্য সেটা হচ্ছে পথের পার্থক্য। ইসলামের কোনো মৌলিক বিষয়ে না। শরিয়তের বেসিক বিষয় তথা নামাজ, রোজা, হজ্জ, আল্লাহ, কেয়ামত প্রসঙ্গে কারো কোন ভিন্নতা নাই। এক্ষেত্রে জামায়াতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের যে আক্বিদাগত ফারাক তা ঘুচবে নাকি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে আবার এমন প্রশ্নে খেলাফত মজলিসের এ নেতা বলেন, ইসলামি রাষ্ট্রের যে ধারণা তাতে কারো দ্বিমত নেই। যেগুলো আছে সেগুলো ভিন্ন ব্যাপার। ফলে ঐক্যে কোন বাধা নাই। এখানে জোটও হচ্ছে না কারও নেতৃত্বে। তাই জোটবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে যে আক্বিদার প্রশ্ন সেটিও নাই। এখানে একক প্রার্থী বাছাইয়ে সকল ইসলামপন্থি দলের সমঝোতা হবে। তবে সেটি কীভাবে হবে তা নির্বাচনের ঘোষণা ও রোডম্যাপ সরকারের তরফে এলেই বোঝা যাবে।
এক আসনে এক প্রার্থীর আলোচনার কথা স্বীকার করেন জামায়াত নেতা জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারও। তিনি বলেন, আমাদের (ইসলামপন্থি দলগুলো) মধ্যে এ আলোচনা চলছে। আমরা সকল দল মিলে একজন প্রার্থী দেয়ার ক্ষেত্রে একমত হয়েছি। সেভাবেই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। নির্বাচন সামনে রেখে এতে কারা থাকবে তা আরও স্পষ্ট হবে বলেও মনে করেন দেশের অন্যতম বড় ধর্মভিত্তিক দলের এ নেতা।
এ বিষয়ে খেলাফত মজলিসের নেতা আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ধর্মভিত্তিক দলগুলো এক আসনে একজন প্রার্থী দিতে পারলে ভাল ফল আসবে। একপ্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা লোয়ার হাউজে বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচনের কথা বলেছি। উচ্চকক্ষের ক্ষেত্রে প্রোপরশনেট পদ্ধতিতে প্রতিনিধি নির্বাচনের কথা বলেছি। তাহলে সকলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে। একই প্রশ্নে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিপপ চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সর্বশেষ দুটি নির্বাচনের ফলাফল সামনে আনেন। তিনি বলেন, এরপর ‘ইসলামিক র্যাডিকেলাইজেশন’ এর মাত্রা অনেক বেড়েছে। জামায়াত এক সময় ৫-৬ শতাংশের প্ল্যাটফর্ম ছিল। এখন সে অবস্থা নাই। অন্তর্বর্তী সরকার আসার পরে জামায়াত সবচেয়ে বেশি সুসংহত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারপার্সন ড.
কলিম উল্লাহ। তিনি বলেন, প্রশাসন, শিক্ষাসহ সব খাতে তাদের বেশি লোক নিয়োগ হয়েছে। এরাই তো সামনের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবে। তিনি আরও বলেন, এই দলটির কাছে থেকে অন্য ইসলামী দলগুলো শিখছে। এছাড়া ‘তুরস্কের এরদোয়ানের এ কে পার্টির আদলে ছাত্রদের নতুন দল’ হচ্ছে। সেটাও সামনের নির্বাচনে বাড়তি ভূমিকা রাখবে। কলিম উল্লাহ কথার সত্যতা পাওয়া গেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এর বক্তব্যে। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরাই বসিয়েছি। অথচ এই সরকারের কারো কারো ভেতরে ভারতের প্রেতাত্মা ভর করেছে। আমরা ভারতকে মানি না। ভারতের আধিপত্যবাদ কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না। বিগত দিনে ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত সব চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে জামায়াতের নিবন্ধন পুনর্বহাল ও দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে কুমিল্লা মহানগরী জামায়াত আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলে বেড়েছে উদ্বেগ
স্টাফ রিপোর্টার
ভারত বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করার পর দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে আলোচনা ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তে পরিমাণে কম হলেও আর্থিক প্রভাব পড়তে পারে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক খাতে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্রের (আইটিসি) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত তিন বছরে ভারতের তৈরি পোশাক আমদানিতে বাংলাদেশের অংশ ছিল গড়ে ৪১ শতাংশের বেশি। ২০২২ সালে ভারত তৈরি পোশাক আমদানি করেছিল ১৭৩ কোটি ডলারের, যার মধ্যে ৭১ কোটি ১০ লাখ ডলারের পণ্য যায় বাংলাদেশ থেকে। ২০২৩ ও ২০২৪ সালেও একই প্রবণতা বজায় ছিল। বিকেএমইএ ও বিজিএমইএ সূত্র বলছে, ভারতের বাজারে বাংলাদেশের নিট ও ওভেন পোশাকের প্রতিযোগিতামূলক মূল্য, মান এবং সরবরাহ সক্ষমতা এখনও আকর্ষণীয়। পরিসংখ্যান বলছে, ভারতের তৈরি পোশাক বাজারে বাংলাদেশের আধিপত্য ক্রমেই সুসংহত হচ্ছে।
আইটিসি-এর সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে ভারত বিশ্ববাজার থেকে ১৭২ কোটি ৫৫ লাখ মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করে। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে যায় ৭১ কোটি ৯ লাখ ডলারের পণ্য, যা ভারতের আমদানির ৪১.২০ শতাংশ। ২০২৩ সালে দেশটির আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫৬ কোটি ৪৪ লাখ ডলারে, যার মধ্যে ৬৬ কোটি ১৯ লাখ ডলারের পোশাক যায় বাংলাদেশ থেকে অর্থাৎ বাংলাদেশের অংশীদারত্ব ৪২ দশমিক ৩১ শতাংশ। ২০২৪ সালে ভারতের মোট তৈরি পোশাক আমদানির পরিমাণ ছিল ১৫৪ কোটি ৫৮ লাখ মিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ৬৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ, দখলে রাখে ৪১ শতাংশ বাজার। অর্থাৎ তিন বছর ধরেই ৪০ শতাংশের ওপরে অবস্থান করে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের জন্য এটি একটি বড় অর্জন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক এবং বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘এই পরিসংখ্যান বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা ও গ্রহণযোগ্যতার প্রতিফলন। ভারতের মতো বিশাল ও বৈচিত্র্যময় বাজারে আমাদের পণ্যের প্রতি আগ্রহ আগামী দিনে আরও সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টি করছে।’ তিনি বলেন, ‘রাজনীতি যাই হোক, ভারতের সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়িক চাহিদা কমবে না। বরং এখন আরও কূটনৈতিকভাবে সক্রিয় হতে হবে।’ তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল সরাসরি পোশাক রফতানিতে প্রভাব না ফেললেও এটি দুই দেশের ব্যবসায়িক আস্থায় ঘাটতি তৈরি করতে পারে। ভবিষ্যতে স্থায়ী ও নিরবচ্ছিন্ন বাণিজ্য প্রবাহ নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি বলে মত তাদের।
অপরদিকে ইপিবির হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ভারতের বাজারে ১২৫ কোটি ১৭ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি করেছে, যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ কোটি ২৯ লাখ ডলার বেশি। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাত থেকে এসেছে ৪৭ কোটি ৮২ লাখ ডলার, যা এই সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি১৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের মতো বিশাল বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের গ্রহণযোগ্যতা ক্রমাগত বাড়ছে, যা দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার পরিধিকে বিস্তৃত করছে।
নিট পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএয়ের সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ভারতে আমাদের পোশাকের ভালো বাজার তৈরি হয়েছে। একসময় রফতানি ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল, পরে কিছুটা হোঁচট খেলেও আবার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরেছে। এই গতি ধরে রাখতে হলে কূটনৈতিকভাবে আরও সক্রিয় হতে হবে।’
২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতকে পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছিল ২১৩ কোটি ডলার, যা ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ২ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। তবে পরের অর্থবছরে কিছুটা ভাটা পড়ে রফতানি কমে আসে ১৫৬ কোটি ৯২ লাখ ডলারে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রতিবছর ভারতে ২ বিলিয়ন ডলারের কম পণ্য রফতানি করলেও আমদানি করে প্রায় ৮ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। অর্থাৎ, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ভারতে বাংলাদেশের বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারত থেকে পণ্য আমদানি করে প্রায় ৯ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসেই (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ভারতের বাজারে রফতানি করেছে ১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি। রফতানি পণ্যের মধ্যে তৈরি পোশাক, পাটজাত পণ্য, চামড়া ও প্লাস্টিক সামগ্রী রয়েছে। অন্যদিকে ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য আসছে প্রধানত চাল, গম, নানা প্রকার কৃষিপণ্য, অটোমোবাইল যন্ত্রাংশ, কাঁচামাল ও বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য।
২০২০ সালের ২৯ জুন ভারত ‘ব্যবসা সহজীকরণ’ নীতির আওতায় বাংলাদেশকে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেয়। এর আওতায় পণ্য বেনাপোল-পেট্রাপোল দিয়ে ভারতের ভূখণ্ড অতিক্রম করে কলকাতার দমদম বিমানবন্দর কিংবা সমুদ্রবন্দর হয়ে তৃতীয় দেশে যেতো। কিন্তু গত ৯ এপ্রিল ভারতের সিবিআইসি আকস্মিকভাবে ওই সুবিধা বাতিল করে। ফলে একইদিন বেনাপোলে আটকে যায় তৈরি পোশাক খাতের তিনটি প্রতিষ্ঠানের চারটি ট্রাকভর্তি রফতানিযোগ্য পণ্য। এসব পণ্য স্পেনে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমস ট্রাকগুলোকে প্রবেশের অনুমতি না দেয়ায় তা ফেরত নিতে হয়। তবে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের অনুমতি এখনও বলবৎ আছে ভারতের জন্য। ২০১৮ সালের চুক্তির আওতায় ২০২৪ সালের ২৪ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) একটি আদেশ জারির মাধ্যম ভারতের আমদানি-রফতানিকারকরা এ সুবিধা পাচ্ছেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
ভোটে একমঞ্চে লড়বে ইসলামি দলগুলো
- আপলোড সময় : ১২-০৪-২০২৫ ১০:০৬:৩৬ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১২-০৪-২০২৫ ১০:০৬:৩৬ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ